রাতে শুতে গেলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন বালিশে লালায় ভর্তি হয়ে গেছে। ঘুমের মধ্যে মুখ দিয়ে লাল পড়ার মতো ঘটনা অনেকের ঘটে। কিন্তু বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তা দিই না আমরা কেউই। বড়জোর একটু হাসিঠাট্টা করে ছেড়ে দিই। কিন্তু এটি যে কিছু ক্ষেত্রে শরীরের ভেতরের বড় সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে তা জানেন না অনেকেই। সাধারণভাবে ঘুমের সময় মুখ খোলা থাকলে বা লালা বেশি তৈরি হলে লাল বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু যদি এটি নিয়মিত হয় এবং তার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে বিষয়টিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। কোন কোন কারণে হতে পারে এমনট?
১। মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস থাকলে এমনটা হতে পারে। অনেকের নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকে, কেউ কেউ আবার সাইনাস ইনফেকশন বা সর্দির কারণে হাঁ করে ঘুমোন। আসলে ওই সময় মুখ খুলে শ্বাস নিলে সুবিধে হয়। মুখ খুলে শ্বাস নিলে, লালা বাইরে চলে আসে।
২। অতিরিক্ত লালা উৎপাদন হয় যাঁদের তাঁদের ঘুমের সময় লালা নিঃস্বরণ হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে হাইপারসালিভেশন (Hypersalivation)বলে। দাঁতের সমস্যা, মাড়ির প্রদাহ বা পাকস্থলীর এসিড রিফ্লাক্স এর কারণে হতে পারে।
৩। শোওয়ার ভঙ্গির দোষেও এমনটা হতে পারে। কাত হয়ে বা উপুড় হয়ে শোওয়ার কারণে অনেক সময় লালা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
৪। টনসিল বা অ্যাডিনয়েডের সমস্যা থাকলেও এমনটা হতে পারে। এগুলো বড় হয়ে গেলে নাক দিয়ে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। তখন হাঁ করে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে লালা নিঃস্বরণ হতে পারে।
৫। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও ঘুমনোর সময় মুখ দিয়ে লালা নিঃস্বরণ হতে পারে। কিছু ওষুধ, বিশেষত অ্যান্টিডিপ্রেসড বা নিউরোলজিক্যাল ওষুধ, লালার নিঃস্বরণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
কোন কোন রোগ হতে পারে?
১। স্নায়ুরোগ (Neurological disorders) – পারকিনসনস ডিজিজ, ALS (Amyotrophic Lateral Sclerosis) বা সেরিব্রাল পালসির মতো রোগে মুখের পেশি এবং স্নায়ুর নিয়ন্ত্রণ কমে যায়, ফলে লালা জমে যায়।
২। স্ট্রোকের প্রভাব – মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা ব্লকেজ হলে মুখের পেশি দুর্বল হয় এবং লালা ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।
৩। স্লিপ অ্যাপনিয়া – ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ শ্বাস কষ্ট হওয়া এ সমস্যার অন্যতম কারণ। মুখ খুলে শ্বাস নিতে গিয়ে লালা ক্ষরণ হয়।
৪। গলার বা মুখের সংক্রমণ – যেমন টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস বা ওরাল থ্রাশ লালা বাড়িয়ে দেয়। সেই ক্ষেত্রে ঘুমোনোর সময় লালা ক্ষরণ হতে পারে।
৫। গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) – পাকস্থলীর অ্যাসিড মুখ পর্যন্ত উঠে আসলে লালার পরিমাণ বেড়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
১। যদি নিয়মিত ও অতিরিক্ত লালা পড়ে এবং এর সঙ্গে কথা বলা বা গিলতে অসুবিধা হয়।
২। যদি মুখের এক পাশ দুর্বল হয়ে যায় বা হাত-পা অসাড় লাগে (স্ট্রোকের সম্ভাবনা)।
৩। যদি এর সঙ্গে অতিরিক্ত নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বা দিনে ঘুম ঘুম ভাব থাকে (স্লিপ অ্যাপনিয়া)।
৪। যদি লালার সঙ্গে রক্ত, দুর্গন্ধ বা ব্যথা থাকে (সংক্রমণ বা মুখের ক্যান্সারের সম্ভাবনা)।
নিয়মিত এই সব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নিউরোলজিস্ট বা ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।